বিসিএস প্রস্তুতির সঠিক রুটিন বানানোর সহজ পদ্ধতি বিসিএস পরীক্ষার নাম শুনলেই মনে হয় বিশাল এক সমুদ্র — যেটার এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে হলে লাগে ধৈর্য, নিয়মিততা আর সঠিক পরিকল্পনা। তবে অনেকেই এই পরীক্ষার দিকে ছুটে গেলেও, একটি সঠিক রুটিনের অভাবে মাঝপথেই হারিয়ে যায়। আজ আমরা জানবো কীভাবে খুব সহজে বানানো যায় এমন একটি রুটিন, যা শুধু বাস্তবসম্মতই নয়, বরং কার্যকরও।

কেন প্রয়োজন সঠিক রুটিন?

একজন বিসিএস পরীক্ষার্থীকে পড়তে হয় বিশাল পরিমাণ সিলেবাস — সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, মানসিক দক্ষতা, আইসিটি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, নৈতিকতা, সংবিধান, এমনকি প্রফেশনাল জ্ঞানও। এতোসব কিছু একসাথে সামলাতে গেলে দরকার হয় সুশৃঙ্খল সময় ব্যবস্থাপনার। একটি রুটিন না থাকলে:

  • সময় নষ্ট হয়

  • অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বেশি সময় চলে যায়

  • সব বিষয়ের উপর সমান গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয় না

  • হতাশা ও দুশ্চিন্তা বাড়ে

তাই রুটিন থাকা মানে নিজের জন্য একটি মানসিক নকশা তৈরি করে নেওয়া, যা প্রতিদিনের পথচলাকে সহজ করে তোলে।


ধাপে ধাপে রুটিন তৈরি সহজ পদ্ধতি

১. নিজের সময় বিশ্লেষণ করুন

প্রথম ধাপেই জানতে হবে—আপনার হাতে দিনে কত ঘণ্টা সময় আছে পড়াশোনার জন্য। আপনি যদি চাকরিজীবী হন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে দিনে ৪-৬ ঘণ্টা সময় বের করতে হবে। আর যদি ফুলটাইম পড়াশোনা করেন, তাহলে ৮-১০ ঘণ্টাও দিতে পারবেন। নিজের জীবনধারার সঙ্গে খাপ খায়, এমন বাস্তবসম্মত সময় নির্ধারণ করাটাই সবচেয়ে জরুরি।

২. সিলেবাস ভাগ করুন বিষয়ভিত্তিক

সাধারণত বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নিচের বিষয়গুলো থাকে:

  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

  • ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য

  • বাংলাদেশ বিষয়াবলি

  • আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

  • ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

  • সাধারণ বিজ্ঞান

  • কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি

  • মানসিক দক্ষতা

  • গাণিতিক যুক্তি

  • নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন

এই প্রতিটি বিষয়কে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে ভাগ করে নিন। যেমন:

দিন বিষয়
রবিবার বাংলা + সাধারণ জ্ঞান
সোমবার ইংরেজি + গণিত
মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিষয়াবলি + আইসিটি
বুধবার আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি + নৈতিকতা
বৃহস্পতিবার সাধারণ বিজ্ঞান + ভূগোল
শুক্রবার রিভিশন + মডেল টেস্ট
শনিবার উইকলি রিভিশন + ভুল বিশ্লেষণ

৩. সময়ভিত্তিক রুটিন তৈরি করুন

দিনে ৮ ঘণ্টা সময় দিতে পারলে সেটাকে ভাগ করুন ছোট ছোট ব্লকে:

  • ৮টা–৯টা: প্রথম বিষয় (নতুন টপিক)

  • ৯টা–১০টা: দ্বিতীয় বিষয় (অনুশীলন)

  • ১০টা–১০:৩০টা: বিরতি

  • ১০:৩০টা–১২টা: MCQ অনুশীলন

  • দুপুরে ২টা–৩টা: রিভিশন

  • বিকেলে ৫টা–৬টা: মডেল টেস্ট বা পুরনো প্রশ্ন সমাধান

  • রাত ৮টা–৯টা: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট নেওয়া

এভাবে প্রতিদিনের রুটিন তৈরি করলে মস্তিষ্ক অভ্যস্ত হয়ে যাবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজ করতে।

৪. রিভিশনের জন্য আলাদা সময় রাখুন

অনেকেই রুটিন বানালেও রিভিশনের কথা ভুলে যান। অথচ বিসিএস-এর মত পরীক্ষায় বারবার রিভিশনই চূড়ান্ত সাফল্যের চাবিকাঠি। সাপ্তাহিক রিভিশন যেমন জরুরি, তেমনই মাসিক রিভিশন প্ল্যানও রাখতে হবে। রিভিশনের সময়:

  • নিজের বানানো শর্ট নোটস দেখে নিন

  • বিগত বছরের প্রশ্ন মিলিয়ে নিন

  • ভুলগুলো চিহ্নিত করুন

৫. মডেল টেস্ট ও প্রশ্ন বিশ্লেষণ

সপ্তাহে অন্তত ২টি মডেল টেস্ট দিন। এর ফলে:

  • সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ে

  • প্রশ্ন ধরার কৌশল রপ্ত হয়

  • ভুলগুলো নিজেই ধরতে পারেন

মডেল টেস্টের পর ভুল প্রশ্নগুলো আলাদা খাতায় লিখে ফেলুন এবং রিভিশনের সময় দেখে নিন।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • মোবাইল দূরে রাখুন: পড়ার সময় ফোন অফ রাখুন বা নোটিফিকেশন ব্লক করুন।

  • পড়ার জায়গা নির্ধারিত রাখুন: এক জায়গায় প্রতিদিন পড়লে মনযোগ বাড়ে।

  • নোট তৈরি করুন: বই পড়ে মুখস্থ না করে, লেখে লেখে পড়লে মনে থাকে বেশি।

  • বন্ধুদের সাথে আলোচনা করুন: কেউ পড়ছে না দেখে আপনি যেন মনোবল না হারান, আবার আপনি নিজেও কাউকে মোটিভেট করুন।

  • নিজের প্রগ্রেস রেকর্ড করুন: প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়েছেন, কী কী পড়েছেন তা লিখে রাখুন। এতে করে নিজের ভুলগুলো ধরতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা – একসাথে সব প্রস্তুতির কৌশল

বিসিএস একটি লম্বা যুদ্ধ, তবে প্রতিদিন ছোট ছোট বিজয়ই আপনাকে শেষ লক্ষ্যে পৌঁছাবে। একটি রুটিন মানে শুধু সময়ের ছক নয়, বরং নিজের স্বপ্নের পথে একটি সুনির্দিষ্ট পথরেখা। আজই বসে যান, আপনার নিজের মতো করে একটি রুটিন তৈরি করে ফেলুন—যেটি আপনার দিনগুলোকে বদলে দেবে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *